মানুষ খেকো দানব [ভয়ংকর অভিজ্ঞতা] - ২

[ পৃথিবীতে অনেক আলৌলিক ব্যাপার আছে যা চোখে না দেখলে হয়তো কখনো বিশ্বাসই করা যায়না।
আসলে হিউম্যান পাওয়ার বলে যে একটা কথা আছে এটি তার একটি নুমনা। ]

থেকে থেকে শব্দটা আমি ঠিকই শুনতে পাচ্ছি। একটা জিনিস খুব অদ্ভুত লাগছিল যে সবাই কেমন জানি নির্বিকার, কেউ কি কিছু শুনতে পাচ্ছেনা। তাহলে আমি কি কোন হ্যালুসেশানে আছি। মানুষের চেচামেচি শোনা যাচ্ছে। আমি আর মামাছাড়া আর বাকি সবাই দেখি দৌড় দিল। আমরাও পিছনে পিছনে দৌড় লাগালাম।

মোটামুটি সামনেই বসলাম। সবাই চিৎকার-চেচামেচি করছে। দুইঘন্টা.........। এরমাঝে আয়োজকদের একজন এসে বলে গেল চুপ করার জন্য এখনি নাকি যাত্রা শুরু হবে। ৫-১০ সেকেন্ট চুপ ছিল আবার চিল্লা-চিল্লি। এবার স্থানীয় চেয়ারম্যানের অনুরোধ। সবাই চুপ।

নুপুরের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। বাদ্যযন্ত্র বেজে উঠল। নাচ শুরু হবে মনে হচ্ছে।সে কি নাচ........নাচের তালে তালে দর্শকরা সবাই উন্মাতাল। মামার দিকে তাকিয়ে দেখি বসে বসে লাফাচ্ছে। মামা আমার দিকে তাকিয়ে কিছুটা লজ্জা পেল। কেউ কেউ টাকাও ছুড়ে মারছে। নৃত্যশিল্পী টাকা কুড়িয়ে ব্লাউজের ফাক দিয়ে বুকে রাখছে আর গা থেকে ধীরে ধীরে কাপড় খুলে ফেলছে। মামাকে দেখি বসা থেকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে লাফাচ্ছে। এদিকে দর্শক সারি থেকে কে জানি কাগজ দিয়ে বল বানিয়ে নৃত্যশিল্পীর গায়ে মারল। শিল্পী কিছুটা বিব্রত বোঝাই যাচ্ছে।

আয়োজককারীদের মধ্য থেকে একজন এসে অনুরোধ করে যাচ্ছে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে। অহেতুক জামেলা কার সহ্য হয়? কেউ একজন ঐ আয়োজককারীর গায়ে জুতা ছুড়ে মারল। সেচ্ছাসেবক দলের আট-দশজন মিলে একটা লোককে সনাক্ত করে মাইর শুরু করল। সাথে সাথে দর্শকরাও ঝাপিয়ে পড়ল। মুহুর্তের মাঝেই হাজার হাজার মানুষ দৌড়াদৌড়ি শুরু করল। শরীফ, স্বপন বলল মামা দৌড় দেন....বিরাট মাইর লাগব.......এই এলাকা খুব খারাপ।
আমরা দৌড় লাগালাম।

শরীফ, স্বপনরা সামনে দিয়া আমরা পিছনে। দৌড়াচ্ছিতো... দৌড়াচ্ছিতো...। পিছন দিয়া ধর ধর....। জইল্যারে ছাড়িসনা.........মজিত্যা কই? এরকম হাজারও চিৎকার কানে ভেসে আসছে। পিছনে তাকিয়ে দেখি হাজারও মানুষ দ্বিক-বেদ্বিক হয়ে দৌড়াচ্ছে। আমরা তখন রাস্তাছেড়ে কাশবনের ভিতর দিয়া হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে আগাচ্ছি। মামার জুতা ছিড়ে গেছে। বেচারা ঐ জায়গায় বসে জুতার জন্য শোক করা শুরু করল। মামা আবার ভীষন কৃপণতো। আমরা মামাকে ধরে টেনে হিচড়ে ভিতরে যাচ্ছি। ধীরে ধীরে ধর ধর আওয়াজটাও স্তিমিত হয়ে আসছে।

আমরা নদীরপাড়ে এসে দাড়ালাম। হালকা চাদনি। ঘাটে কেউ নেই। সহজেয় বুঝতে পারলাম ভয়ে কেউ এদিকটায় আসেনি। শরিফ বলল এখানে দাড়ানো মোটেও নিরাপদ নয়। যে কোন ভাবেই নদীপাড় হতে হবে। আমি আবার সাতার জানিনা। মামা বলল ভাগ্নে তুমি আমার কাদে উঠ। আমি রাজি হলামনা। আমি সারাজীবন সব জায়গায় মাতব্বরি করতাম শুধু পানি ছাড়া। কেননা হাজার চেষ্টা করেও যে সাতারটা শিকতে পারলামনা। আমার সবসময় ভয় বেশী পানিতে গেলে নিচ দিয়ে যদি কেউ টান দেয়। সবাই আমাকে অনেক বুঝানোর পরও রাজি হলাম না। সবাই নদীর পাড়ে দাড়িয়ে আছি। একটা অজানা আতংক সবার ভিতরে কাজ করছে।

আল্লাহু... আল্লাহু... । সবাই একটু ছড়ানো-ছিটানো থাকলেও দেখলাম মুহুর্ত্তের মাঝে একসাথে জড়ো হয়ে গেল। শব্দটার উৎপত্তি বুঝার চেষ্টা করতে লাগলাম। এর মাঝে শুনলাম 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু....। কাশবনের ভিতর দিয়ে যে রাস্তাটা চলে গেছে সে দিকে একটা ক্ষীণ আলোর রেখা কাশবনের উপরদিয়ে দেখা যাচ্ছে। আমরা সবাই সেদিকে তাকিয়ে রইলাম। আলোর তীব্রতা এবং শব্দের তীব্রতা বেড়েই চলছে।

চলবে...........।

0 comments:

Post a Comment

    Definition List

    Text Widget